আড়াইহাজার টাইমস.কম অনলাইন নিউজ ডেস্ক: লেখক-নাট্যকার আহমেদ মূসার জন্ম ১৯৫৭ সালের ১২ই ফেবব্রুয়ারী, নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ইজার কান্দী গ্রামে।মানুষের প্রতি তার দরদ অপরিসীম এবং সেই সুত্রেই স্থুল-ধাম্বিক অপমানুষদের মহার্ঘ বিলাসিতা করতে গিয়ে তাকে অনেক মুল্য দিতে হয়েছে জীবনে। সেই কবে পেছনে ফেলে এসেছেন কাশবন দোলানো দু:খী গ্রাম দু দু বালুচর ঘুঘু ডাকা বিষন্ন দুপুর আর রূপান্তরহীন জীবন। বস্তত এগুলোই তার সৃষ্টিশীল প্রেরণার তালপুকুড়। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বিরোধী কয়েকটি সাড়া জাগানো গ্রন্থ লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কিত গবেষনা সহ আরো কিছু সমীক্ষা-ধর্মী গ্রন্থও তার রয়েছে।
কিন্তু গল্প উপন্যাস নাটক তার আদি ঠিকানা।তিনি বার বার ফিরে এসেছেন শেকড়ে পানি ডালতে। তার চারটি উপন্যাস এক মলাটে ছাপা হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে বুকে দোলে কাশ বন। সেটার নাট্যরূপ ও দেয়া হয়েছে।তার গল্প গ্রন্থ উজান চর, ভাটির চর পাঠকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিলো। প্রকাশিত হয়েছে নির্বাচিত গল্প গ্রন্থ।তার মঞ্চ নাটক হবুচন্দ্র সমাচার তৎকালীন হাসির নাটকের অন্যতম।দীর্ঘ দিন একটানা মঞ্চস্থ হয়েছে এক যে ছিলো আকাল, নাদের আলীর সাহিত্য সম্মেলন, পথ নাটক আহা বেশ বেশ বেশ এবং কয়েকটি টিভি ধারাবাহিক ও একক নাটক নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে। বিশেষ করে তাঁর লেখা নাটক চান মিয়ার নিগেটিভ পজেটিভ,বহু বছর পরেও দর্শক এবং নাট্যকর্মীদের স্মৃতিতে উজ্জল রয়েছে। তার কয়েকটি মঞ্চ নাটক,পথনাটক ও একক অভিনয় নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে মঞ্চ নাটক সমগ্র।গাঁও গ্রামের ছড়া,ছোটদের মজনু শাহ, শিশু কিশোর-মঞ্চ নাটক কবি মহারাজার দেশে প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখা প্রবন্ধ- নিবন্ধ এবং তার গ্রহন করা বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের সাক্ষাত্কার আরো দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।আমাদের সৃজনশীল সাহিত্যাঙ্গনে তিনি আসন করে নিয়েছেন। জীবনে বহু এবং বিচিত্র পেশায় পেশায় তিনি নিয়েজিত থাকলেও স্থির ছিলেন সাংবাদিকতায়।আহমেদ মূসা প্রথাগত শিক্ষা শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকাত্তর নিয়ে।বিভিন্ন সুত্রে সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন অনুসন্ধানি দৃষ্টি নিয়ে। সাংবাদিকতা ছাড়াও ভূমির মায়াবী বক্ষ থেকে সোনালী শস্য অর্জন,শিক্ষতকা, গৃহশিক্ষকতা,বেসরকারী সংস্থায় চাকুরী,ব্যাবসা,চুক্তি ভিত্তিক আমলাপনা,কৃষক সংগঠন,সক্রিয় রাজনিতী তার অভিজ্ঞতার ভান্ডার কে মেদ বহুল করেছে।
আহমেদ মূসা ২০১১ সালে নিউ ইয়র্কে যাত্রা করেন । তার স্ত্রী ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রান্ট হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় তিনি তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এসে প্রবাস জীবন শুরু করেন।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রে আসে তার ছেলে ও মেয়ে। নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে তিনি প্রায় ৩ বছর নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আজকালের সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি সব সময় স্বপ্ন দেখতেন একটি শোষন বৈষম্য হীন সমাজের। তিনি সুদুর আমেরিকায় বসবাস করলেও তার মন পরে থাকতো জন্মভূমির সেই ছোট্র গ্রামে। তিনি তার গ্রামের বিভিন্ন সময়ে সংঘঠিত হত্যাকান্ডের বিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকেতেন এ বিষেয়ে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব উপস্থিত ছিল সব সময়। গত (এপ্রিল ১৭) সকালে দুরার্গ্য ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকার একটি স্থানীয় হাসপাতালে তিনি মারা যান।দেশে ও বিদেশে আবস্থানরত বিশিষ্ট জনেরা তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন
মৃত্যুর পুর্বে তিনি তার জাপিত জীবনের লেখা বই গল্প, নাটক,গ্রন্থের একটি ত্রিমাতিক পরিবেশনা “ আমার যত সৃজন নিবেদন” সমাপ্ত করে গেছেন। গত ২৪ এপ্রিল এই গুনী সাংবাদিক, লেখক, নাট্যকার “আহমেদ মূসা স্মরণে স্মৃতিচারণ ও দোয়া অনুষ্ঠান” ডিজিটাল প্লাটফর্মে (Zoom) গুনীজনদে র আলোচনায় উঠে আসে আহমেদ মূসার কর্মময় জীবন। ওপারে ভালো থাকুন আহমেদ মুসা।